ডিমগুলো ইনকিউবেটরে রাখা হলো। কুমীরের ডিম পারাটা ফার্মের জন্য একটা মাইল ফলক ছিল তাই কেক কেটে সেটা পালন করা হয়েছিল। নভেম্বর মাসে জিওফ আসলো পরামর্শক হিসাবে। পুরো ফার্মের বাবস্থাপনায় অনেক পরিবর্তন আসলো। নতুন করে incubator ডিজাইন করা হলো। ১৭ই নভেম্বর প্রথমবারের মত কুমীরের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলো। জিওফ ফার্মের পরবর্তী স্থাপনাগুলোর ডিজাইন করে দিলো। সে পুরো এক মাস ফার্মেই ছিল।
২০০৬ সালে দুইটা কুমিরছানা জীবিত ছিল, তাও কয়েক ঘণ্টা। এর পর শুরু হলো অপেক্ষার পালা। ২০০৭ সালে ৭টা কুমির ২৬১ টা ডিম দিলো। এর মধ্যে fertile ডিম ছিল ১৪২ টা, তার মধ্যে থেকে বাচ্চা ফুটেছিল ৯৪টা। ২০০৭ সালে জিওফকে আবার আনা হয়েছিল এক মাসের জন্য। তখন ফার্মের incubator চালু হয় যা দিয়ে এক সাথে ৫০০০ ডিম ফুটান যায়। incubator টা সম্পূর্ণ ভাবে বাংলাদেশেই তৈরি, শুধু মাত্র ছোট্ট একটা যন্ত্র অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা হয়েছিল।
২০০৭ সালের পর থেকে আর কুমির মারা যায় নাই, কিন্তু ততদিনে ২৪ টা কুমির আমাদের মরে গিয়েছিল। এদিকে ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ প্রতিবছর কুমীরের ছানার সংখ্যা বেড়ে চলেছে।
রেপ্টাইলস ফার্মে বড় কুমিরগুলো শুধু মাত্র প্রজননের জন্য ব্যাবহার হয়। এদেরকে বছরে নয় মাস মুরগি, মাছ অথবা গরুর গস্ত খেতে দেওয়া হয়। কুমির সপ্তাহে একদিন খায়। সাধারণত একটা পুরুষ কুমীরের সাথে একটা মাদি কুমির থাকে, কোন কোন ক্ষেত্রে একাধিক মাদি কুমিরও থাকতে পারে। বড় কুমীরের যত্ন নেওয়া অনেক সহজ, এর জন্য পানি বদলাতে হয় না। পুকুরে তেলাপিয়া মাছ ছাড়া হয়েছিল, যা নিজে থেকেই পানি পরিষ্কার করতো। অনেক ধরনের পাখী রেপ্টাইলস ফার্মকে স্থায়ী ঠিকানা বানিয়ে ফেলেছিল। পাখী এখানে পুকুর থেকে মাছ খেত, সুযোগ পেলে কুমির আবার সেই পাখী খেয়ে ফেলত।
কুমির ছানার জন্য অনেক যত্নের প্রয়োজন হতো। এদেরকে রাখা হয় সম্পূর্ণ তাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে। এরা প্রচণ্ড সংবেদনশীল, সামান্য আওয়াজে এদের খাওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তাই নির্দিষ্ট একজন বা দুইজন পরিচর্যাকারি ছাড়া আর কেও কুমির ছানার কাছে যেত না।
২০০৫ সালে একদিন মোটরসাইকেল নিয়ে ভালুকা আর ত্রিশালের সমস্ত নার্সারি ঘুরে গাছের চারা ঠিক করলাম। এর পর শুরু হলো গাছ লাগান। ২০১০ সাল নাগাদ বাওকুলের ৪০০০ চারা সহ প্রায় ৬০০০ গাছ লাগান হয়েছিল।
কোম্পানির শুরু থেকেই রেজিস্টার্ড অফিস ঢাকায় আমার বাসা। ঢাকাতে আমাদের কোন অফিস ছিল না, কোন স্টাফ ছিলনা। এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বা বন বিভাগ কারোরই কোন অভিযোগ ছিলনা। ঢাকার অফিসটা মূলত ছিল আমাদের চিঠিপত্র গ্রহণ করার জন্য, তাছাড়া কোম্পানির হিসাব আমরা ঢাকায় রাখতাম। তবে কোম্পানির ওয়েবসাইট ছিল প্রথম থেকেই।
২০১০ সালে এক্সপোর্ট করার সময় পর্যন্ত কোম্পানির যানবাহন বলতে ছিল একটা সাইকেল। ঢাকা থেকে যাওয়া আসার জন্য আমি বেশির ভাগ সময় বাস বা ট্যাক্সি ব্যাবহার করতাম।
কুমিরের ২৩ টা প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে পাওয়া যায় ৩টি প্রজাতি – লোনা পানির কুমির, মিঠা পানির কুমির আর ঘড়িয়াল। ২৩ টি প্রজাতির মধ্যে বাণিজ্যিক ভাবে চাষ হয় সাতটি প্রজাতির, তার মধ্যে লোনা পানির কুমীরের চামড়ার দাম সবচেয়ে বেশী। অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, পাপুয়া নিউ গিনি আর বাংলাদেশে লোনা পানির কুমির চাষ হয়। যদিও পৃথিবীর প্রায় চল্লিশটি দেশে কুমির চাষ হয়, অন্যান্য প্রজাতির।
কুমীরের চামড়া এর প্রধান বিক্রয়যোগ্য উপকরণ। ডিমফুটে বের হওয়ার পর প্রায় তিন বছর পর একটা কুমির বিক্রি উপযোগী হয়। তখন কুমিরটাকে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মেরে এর চামড়া আর মাংস আহরণ করা হয়। কুমীরের চামড়া মানুষ ব্যাবহার করছে প্রায় ২০০ বছর ধরে, কিন্তু কুমীরের বাণিজ্যিক ফার্মের প্রচলন ৬০এর দশকের শেষ দিকে, উত্তর আমেরিকাতে।
লোনা পানির কুমীরের চামড়ার সবচেয়ে রপ্তানিকারক দেশ অস্ট্রেলিয়া, আর সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ ফ্রান্স। CITES কনভেনশনের আওতায় কুমীরের ব্যাবসা পরিচালিত হয়।